
How I started my business
বিয়ের এক মাস পরেই এলো কোভিড।
একদিন ফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে গয়না তৈরির সরঞ্জামের একটা পেইজ চোখে পড়লো।
আমার আবার crafting এর জিনিসপত্র দেখলে মাথা ঠিক থাকে না।
এগুলো দেখে কয়েকটা বানানোর খুব ইচ্ছে হলো।
ছবি নিয়ে টুপ করে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিলাম, ভাবছিলাম কি না কি বলে… হয়তো বলবে, “এগুলা বানিয়ে কি হবে?”
কিন্তু না, অনুমতি পেয়ে গেলাম।
এরপর ঢাকায় ফিরে সেই পেইজের লোকেশন দেখে তাদের দোকানে চলে যাই।
দোকান দেখেতো আমার চোখ ছানাবড়া!
আমি কেবল দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এটা-ওটা দেখেই যাচ্ছিলাম, কিছু কিনবার কথা আর বলি না।
দোকানের ভিতর থেকে ডাক আসে,
“ভেতরে এসে দেখো, কী কী জিনিস লাগবে গয়না বানাতে, সব নিয়ে নাও।”
সেই দিনের কেনা থেকে একটু একটু করে শুরু হলো আমার গয়নার বিজনেস।
একটা পেইজ খুলে, কয়েকটা বুস্ট দিয়ে অনেক গয়না বিক্রি করলাম।
এভাবে ২ বছর চলেছে।
তারপর মা হলাম।
কাজবাজ সব বন্ধ করে দিলাম।
কারণ, মা হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
প্রথমবার মা হয়েছি, অনেক অনেক কিছু শিখতে হয়েছে।
এর পাশাপাশি ওটা কন্টিনিউ করতে চাচ্ছিলাম না।
চেয়েছি সব বিক্রি করে দিই, কিন্তু এই লোক (আমার জামাই) আমাকে একটা পুতিও বিক্রি করতে দিলেন না—
(তার মেয়ে এগুলো দিয়ে খেলবে, শিখবে তাই)।
একটা ড্রয়ার ভরা জিনিসপত্র এখনো আছে।
বাচ্চা হবার পরে অ্যানজাইটি, ডিপ্রেশন—সবকিছু মিলিয়ে কেমন অযথা কান্নাকাটি করতাম।
কেন এমন করতাম নিজেই বুঝতাম না।
কি সব যে পাগলামি, ছাগলামি করেছি—মনে পড়লে হাসি পায়, আবার বেচারা জামাইয়ের জন্য খুব মায়া লাগে।
আহারে, কি অত্যাচারটাই না সহ্য করেছে!
এরপর Choki, Decor Apa, Her Happy Place—এদের ভিডিও দেখে নিজের মুহূর্তগুলো ক্যাপচার করার খুব শখ জাগলো,
কিন্তু ভাবতাম, “কে দেখবে?” আদৌ কি কেউ দেখবে?
তখন আমার সাহেব সাহস দিতে থাকে।
“তোমার বিজনেস পেইজে তো ৫০০০ মানুষ আছেই, তারা দেখবে!”ভালো কন্টেন্ট হলে দেখবেই,না দেখলে না দেখবে...
প্রতিদিন একটু একটু করে ঠেলেঠুলে বিজনেস পেইজটার নাম পরিবর্তন করে Vlogging পেইজে বানিয়ে ফেলে।
নিউমার্কেট থেকে কাপড় এনে যখন আমার বানানো ড্রেসগুলো শেয়ার করতাম, ইনবক্সে মেসেজের ঝড় শুরু হতো—
“কোন পেইজ থেকে নিয়েছি?”
“দাম কত?”
যখনই তারা জানতে পারতো এটা কোনো পেইজের না আমার বানানো, অমনি তাদের মন ভেঙে যেত—
“কেন আপনি এগুলো বিক্রি করেন না?” 🤦♀️
এরপর একদিন কাপড় কিনতে গিয়ে আমার সাহেব বললেন,
“একটু বেশি করে নিয়ে নাও, কেউ চাইলে বানিয়ে দিবে।
আমি তো কিছুতেই বারতি কাপড় নিবই না—“যদি কেউ না নেয়?”
কিন্তু কিসের কি—আপনারা নিলেন তো নিলেন, নিজের জন্য বানানো ড্রেসটাও নিয়ে নিলেন।
কি যে একটা আনন্দ লাগছিলো!
নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না, আমার বানানো ড্রেস কেউ এত আগ্রহ নিয়ে কিনে নিয়েছে।
তখনো আমি ব্যবসার ব্যাপারে কিছুই ভাবিনি।
ভাবছিলাম, কয়েকজন নিয়েছে এই তো, এটাই খুশি।
কিন্তু হঠাৎ একদিন সাহেব আমাকে না জানিয়ে পাইকারি মার্কেট থেকে কয়েকটা প্রিন্টের ৫-৬ গজ করে কাপড় নিয়ে আসলেন!
এই যে, দিলেন আবার আমাকে ব্যবসা ধরিয়ে!
কাপড়গুলোর ছবি স্টোরি দিয়ে এত রেসপন্স পেলাম (আলহামদুলিল্লাহ) যে এরপর আর বসে থাকতে পারলাম না।
৫ গজ, ১৫ গজ, ৩০ গজ, ১০০ গজ থেকে এখন ৫০০ গজ করে কাপড় আনতে হয়।
একটা ছোট মেশিন নিয়ে শুরু করেছিলাম, এখন ৩টা গার্মেন্টস মেশিন আলহামদুলিল্লাহ।
ঘরের আয়রন দিয়েই কাজ সারতাম—সেটাকে অবসর দিয়ে একটা গার্মেন্টস আয়রন নিয়েছি।
আপনাদের ভালোবাসায় এভাবেই একটু একটু করে আগাচ্ছে…
আর আমি বিশাল স্বপ্ন বুনছি।